বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫
বাজিতপুর নিউজ
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে ভোগান্তি, রেজাল্টে জটিলতা!

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে ভোগান্তি, রেজাল্টে জটিলতা!

বাংলাদেশের বৃহত্তম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি প্রক্রিয়া এবং ফলাফল প্রকাশ—দুটিই যেন শিক্ষার্থীদের জন্য একেকটি পরীক্ষার নামান্তর। প্রতিবছর লক্ষাধিক শিক্ষার্থী এই প্রতিষ্ঠানের অধীনে পড়াশোনার জন্য আবেদন করে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, ভর্তি কিংবা রেজাল্ট—উভয় ক্ষেত্রেই শিক্ষার্থীদের নিয়মিত ভোগান্তির মুখোমুখি হতে হয়। প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা, ওয়েবসাইট ক্র্যাশ, সিদ্ধান্তে দেরি ও স্বচ্ছতার অভাব—সব মিলিয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় যেন সময়ের চেয়ে পিছিয়ে থাকা এক প্রশাসনিক গোড়াপত্তর। ওয়েবসাইট: প্রতি ফলাফলের দিনেই যেন 'ক্র্যাশ ফেস্ট'জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট (www.nu.ac.bd এবং www.nu.edu.bd/results) যেকোনো রেজাল্ট প্রকাশের দিনেই প্রায় নিয়ম করে ধসে পড়ে। শিক্ষার্থীরা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চেষ্টা করেও লগইন করতে পারেন না। ওয়েবসাইটে ঢুকতে গেলেই ‘504 Gateway Time-out’ বা ‘Server is busy’ এমন মেসেজ চোখে পড়ে। ফলাফল জানার জন্য তখন শুরু হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্টের ঝড়: “ভাই, রেজাল্ট কোথায় দেখি?” “কারো রেজাল্ট এসেছে?” “এখনও ওয়েবসাইটে ঢুকতে পারছি না!”এই চিত্র যেন এখন সাধারণ, এবং দুঃখজনকভাবে মেনে নেওয়া ‘নিয়মিত ঘটনা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভর্তিতে বিলম্ব, বিভ্রান্তি ও বারবার পরিবর্তিত সিদ্ধান্তজাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি প্রক্রিয়ায় মূলত অনলাইন ভিত্তিক আবেদন গ্রহণ করা হয়। তবে, আবেদন শুরু হওয়ার কয়েকদিন পরই দেখা যায়, ওয়েবসাইটে সমস্যা, তথ্য সংশোধনের সুযোগ না থাকা কিংবা ডেটা ফরমেটিং-এর ভুলে বহু শিক্ষার্থী আবেদন সম্পন্ন করতে পারে না।তাছাড়া, কখনো কখনো ভর্তি সংক্রান্ত নীতিমালাও হুট করেই পরিবর্তন হয়—কোন বিভাগে কতজন নেওয়া হবে, দ্বিতীয় মেধা তালিকা আসবে কি না, মাইগ্রেশন হবে কি না—এসব বিষয়ে কর্তৃপক্ষ সময়মতো স্পষ্ট বার্তা দিতে ব্যর্থ হয়। ফলে শিক্ষার্থীরা দিন শেষে পড়ে যান চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে। হেল্পলাইন ব্যবস্থা নামমাত্র, সহানুভূতির ঘাটতি প্রকটজাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের হেল্পলাইন বলতে যা আছে, তা অনেকটা লোক দেখানো। শিক্ষার্থীরা ফোন করলে অধিকাংশ সময় তা ব্যস্ত পাওয়া যায়, কেউ ধরলেও সমস্যা সমাধানের চেয়ে 'অপেক্ষা করুন'—এই কথাটাই বারবার বলা হয়। অনেকে মেইল করে দিনের পর দিন অপেক্ষা করেও কোনো জবাব পান না। নোটিশ–ব্লার এবং সিদ্ধান্তের দেরিযেকোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত, যেমন: রেজাল্ট পুনঃনিরীক্ষণ, ফি ফেরত, মাইগ্রেশন বা আসন বাতিল—এসব বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ খুবই ধীরগতিতে কাজ করে। কখনো একটি সিদ্ধান্ত নিতে ১৫ দিন থেকে এক মাসও সময় লেগে যায়। অথচ, শিক্ষার্থীদের সামনে ভর্তি পরীক্ষার সময়সূচি, ডেডলাইন, পরবর্তী শিক্ষা জীবনের চাপ—সব কিছু ঘনিয়ে আসে। শিক্ষার্থীরা যা চান:১. ওয়েবসাইটের আধুনিকায়ন: সার্ভার শক্তিশালী করে যত শিক্ষার্থীই একসঙ্গে লগইন করুক না কেন, যেন সাইট স্লো না হয় বা ক্র্যাশ না করে। ২. সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা: হেল্পলাইন কার্যকর ও সহানুভূতিশীল করতে হবে। শিক্ষার্থীকে ‘বিষয় বুঝে’ গাইড করতে হবে, রোবটের মতো কথা বলা নয়। ৩. সময়ানুবর্তিতা ও স্বচ্ছতা: কোনো সিদ্ধান্ত দিতে যদি তিনবার ভাবতে হয়, তবে তা আগেই জানানো হোক। নিয়মিত আপডেট থাকুক নোটিশ বোর্ডে। 4. মোবাইল অ্যাপ: ওয়েবসাইট সমস্যা হলে বিকল্প হিসেবে একটি লাইটওয়েট অ্যাপ চালু করতে পারে কর্তৃপক্ষ।উপসংহার: জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আগ্রহী লাখো শিক্ষার্থীর এই প্রতিষ্ঠানের প্রতি আস্থা বাড়াতে হলে শুধু একাডেমিক ফলাফল নয়, সেবা ও পরিচালনা ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন প্রয়োজন। প্রযুক্তির যুগে দাঁড়িয়ে একটি রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট ক্র্যাশ করাটাই সবচেয়ে বড় 'ফেল'—এটা সংশ্লিষ্টদের বোঝা জরুরি। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কি সময়ের সঙ্গে তাল মেলাবে, নাকি শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি চালু থাকবে আরও কিছু বছর—এই প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে এখনই।
২৯ মিনিট আগে

কোন পোস্ট নেই !
কোন পোস্ট নেই !

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে ভোগান্তি, রেজাল্টে জটিলতা!

বাংলাদেশের বৃহত্তম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি প্রক্রিয়া এবং ফলাফল প্রকাশ—দুটিই যেন শিক্ষার্থীদের জন্য একেকটি পরীক্ষার নামান্তর। প্রতিবছর লক্ষাধিক শিক্ষার্থী এই প্রতিষ্ঠানের অধীনে পড়াশোনার জন্য আবেদন করে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, ভর্তি কিংবা রেজাল্ট—উভয় ক্ষেত্রেই শিক্ষার্থীদের নিয়মিত ভোগান্তির মুখোমুখি হতে হয়। প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা, ওয়েবসাইট ক্র্যাশ, সিদ্ধান্তে দেরি ও স্বচ্ছতার অভাব—সব মিলিয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় যেন সময়ের চেয়ে পিছিয়ে থাকা এক প্রশাসনিক গোড়াপত্তর। ওয়েবসাইট: প্রতি ফলাফলের দিনেই যেন 'ক্র্যাশ ফেস্ট'জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট (www.nu.ac.bd এবং www.nu.edu.bd/results) যেকোনো রেজাল্ট প্রকাশের দিনেই প্রায় নিয়ম করে ধসে পড়ে। শিক্ষার্থীরা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চেষ্টা করেও লগইন করতে পারেন না। ওয়েবসাইটে ঢুকতে গেলেই ‘504 Gateway Time-out’ বা ‘Server is busy’ এমন মেসেজ চোখে পড়ে। ফলাফল জানার জন্য তখন শুরু হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্টের ঝড়: “ভাই, রেজাল্ট কোথায় দেখি?” “কারো রেজাল্ট এসেছে?” “এখনও ওয়েবসাইটে ঢুকতে পারছি না!”এই চিত্র যেন এখন সাধারণ, এবং দুঃখজনকভাবে মেনে নেওয়া ‘নিয়মিত ঘটনা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভর্তিতে বিলম্ব, বিভ্রান্তি ও বারবার পরিবর্তিত সিদ্ধান্তজাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি প্রক্রিয়ায় মূলত অনলাইন ভিত্তিক আবেদন গ্রহণ করা হয়। তবে, আবেদন শুরু হওয়ার কয়েকদিন পরই দেখা যায়, ওয়েবসাইটে সমস্যা, তথ্য সংশোধনের সুযোগ না থাকা কিংবা ডেটা ফরমেটিং-এর ভুলে বহু শিক্ষার্থী আবেদন সম্পন্ন করতে পারে না।তাছাড়া, কখনো কখনো ভর্তি সংক্রান্ত নীতিমালাও হুট করেই পরিবর্তন হয়—কোন বিভাগে কতজন নেওয়া হবে, দ্বিতীয় মেধা তালিকা আসবে কি না, মাইগ্রেশন হবে কি না—এসব বিষয়ে কর্তৃপক্ষ সময়মতো স্পষ্ট বার্তা দিতে ব্যর্থ হয়। ফলে শিক্ষার্থীরা দিন শেষে পড়ে যান চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে। হেল্পলাইন ব্যবস্থা নামমাত্র, সহানুভূতির ঘাটতি প্রকটজাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের হেল্পলাইন বলতে যা আছে, তা অনেকটা লোক দেখানো। শিক্ষার্থীরা ফোন করলে অধিকাংশ সময় তা ব্যস্ত পাওয়া যায়, কেউ ধরলেও সমস্যা সমাধানের চেয়ে 'অপেক্ষা করুন'—এই কথাটাই বারবার বলা হয়। অনেকে মেইল করে দিনের পর দিন অপেক্ষা করেও কোনো জবাব পান না। নোটিশ–ব্লার এবং সিদ্ধান্তের দেরিযেকোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত, যেমন: রেজাল্ট পুনঃনিরীক্ষণ, ফি ফেরত, মাইগ্রেশন বা আসন বাতিল—এসব বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ খুবই ধীরগতিতে কাজ করে। কখনো একটি সিদ্ধান্ত নিতে ১৫ দিন থেকে এক মাসও সময় লেগে যায়। অথচ, শিক্ষার্থীদের সামনে ভর্তি পরীক্ষার সময়সূচি, ডেডলাইন, পরবর্তী শিক্ষা জীবনের চাপ—সব কিছু ঘনিয়ে আসে। শিক্ষার্থীরা যা চান:১. ওয়েবসাইটের আধুনিকায়ন: সার্ভার শক্তিশালী করে যত শিক্ষার্থীই একসঙ্গে লগইন করুক না কেন, যেন সাইট স্লো না হয় বা ক্র্যাশ না করে। ২. সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা: হেল্পলাইন কার্যকর ও সহানুভূতিশীল করতে হবে। শিক্ষার্থীকে ‘বিষয় বুঝে’ গাইড করতে হবে, রোবটের মতো কথা বলা নয়। ৩. সময়ানুবর্তিতা ও স্বচ্ছতা: কোনো সিদ্ধান্ত দিতে যদি তিনবার ভাবতে হয়, তবে তা আগেই জানানো হোক। নিয়মিত আপডেট থাকুক নোটিশ বোর্ডে। 4. মোবাইল অ্যাপ: ওয়েবসাইট সমস্যা হলে বিকল্প হিসেবে একটি লাইটওয়েট অ্যাপ চালু করতে পারে কর্তৃপক্ষ।উপসংহার: জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আগ্রহী লাখো শিক্ষার্থীর এই প্রতিষ্ঠানের প্রতি আস্থা বাড়াতে হলে শুধু একাডেমিক ফলাফল নয়, সেবা ও পরিচালনা ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন প্রয়োজন। প্রযুক্তির যুগে দাঁড়িয়ে একটি রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট ক্র্যাশ করাটাই সবচেয়ে বড় 'ফেল'—এটা সংশ্লিষ্টদের বোঝা জরুরি। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কি সময়ের সঙ্গে তাল মেলাবে, নাকি শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি চালু থাকবে আরও কিছু বছর—এই প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে এখনই।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে ভোগান্তি, রেজাল্টে জটিলতা!
কোন পোস্ট নেই !
কোন পোস্ট নেই !
কোন পোস্ট নেই !