শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫
বাজিতপুর নিউজ

বিয়ের ৩০ বছর পর একসঙ্গে দাখিল পাস করলেন কিশোরগঞ্জের সাংবাদিক দম্পতি

বিয়ের ৩০ বছর পর একসঙ্গে দাখিল পাস করলেন কিশোরগঞ্জের সাংবাদিক দম্পতি

“শিক্ষার কোনো বয়স নেই”—এই চিরন্তন সত্যকে বাস্তবে রূপ দিলেন কিশোরগঞ্জের কাইসার হামিদ ও রোকেয়া আক্তার দম্পতি। সংসার সামলে, সন্তানদের লেখাপড়া করিয়ে, দীর্ঘ ৩০ বছর দাম্পত্য জীবনের পর এবার একসঙ্গে দাখিল (এসএসসি সমমান) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন এই দম্পতি।

বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) দাখিল পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ হলে জানা যায়, দুজনই নরসিংদীর বেলাব উপজেলার বিন্নাবাইদ দারুল উলুম দাখিল মাদরাসা থেকে জিপিএ ৪.১১ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন। বয়সের ভারে নয়, বরং আত্মবিশ্বাস ও অদম্য মানসিক শক্তিতেই তারা প্রমাণ করেছেন—শিক্ষা গ্রহণে বয়স কোনো বাধা নয়।

কাইসার হামিদ দৈনিক নয়াদিগন্ত এবং রোকেয়া আক্তার দৈনিক বুলেটিন পত্রিকার কুলিয়ারচর প্রতিনিধি হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে সাংবাদিকতা করে আসছেন। সাংবাদিকতার বয়স ৩০ বছর পার হলেও এসএসসি না থাকার ক্ষতটা ভিতরে লালন করে চলেছেন দুজনই।

নিজের অনুভূতি জানাতে গিয়ে কাইসার হামিদ বলেন, “অনেকেই ইচ্ছা করে বলত—এসএসসি না দিয়ে সাংবাদিকতা করেন কিভাবে? কথা শুনে কষ্ট পেতাম, কিন্তু উত্তর দিতাম না। আজ আমরা প্রমাণ করেছি, চেষ্টা করলে অসম্ভব কিছু নেই।”

রোকেয়া আক্তার বলেন, “অল্প বয়সে বিয়ে, এরপর সন্তান জন্ম—সব কিছু মিলে পড়াশোনা আর হয়ে ওঠেনি। কিন্তু মনে সবসময় একটা খচখচ করত। এবার সিদ্ধান্ত নিয়েই পরীক্ষা দিই। আজ ফল পেয়ে খুব ভালো লাগছে।”

এই দম্পতির ঘরে পাঁচ সন্তান। বড় মেয়ে স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন, দ্বিতীয় জন স্নাতক শেষ বর্ষে, তৃতীয় সন্তান নার্সিং পড়ছেন এবং দুই ছেলে স্কুলে পড়াশোনা করছে। সন্তানদের পড়াশোনার পাশাপাশি নিজেদের শিক্ষার প্রতি ভালোবাসা রেখে কাইসার-রোকেয়া জুটি দেখিয়েছেন এক অনন্য দৃষ্টান্ত।

দ্বিতীয় কন্যা জেসমিন সুলতানা বলেন, “মা-বাবা এসএসসি পাস করেননি, এটা আমাদের বলার মতো বিষয় ছিল না। কিন্তু এখন আমরা গর্ব করেই বলি—এই বয়সে তারা যা করেছেন, তা অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।”

পাঠ্যপুস্তক হাতে, সংসার ও পেশার দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি নিয়মিত অধ্যয়ন করে দম্পতির এই সাফল্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও প্রশংসার ঝড় তুলেছে। অনেকেই তাদের উদাহরণ টেনে বলছেন—“লজ্জা নয়, শিক্ষার কোনো বয়স নেই।”

এই দম্পতির গল্প প্রমাণ করল, জীবনে দেরি হতে পারে, কিন্তু যদি ইচ্ছা থাকে, কোনো স্বপ্নই বিলম্বে ধরা দেয় না।

বিষয় : কিশোরগঞ্জ

আপনার মতামত লিখুন

বাজিতপুর নিউজ

শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫


বিয়ের ৩০ বছর পর একসঙ্গে দাখিল পাস করলেন কিশোরগঞ্জের সাংবাদিক দম্পতি

প্রকাশের তারিখ : ১১ জুলাই ২০২৫

featured Image

“শিক্ষার কোনো বয়স নেই”—এই চিরন্তন সত্যকে বাস্তবে রূপ দিলেন কিশোরগঞ্জের কাইসার হামিদ ও রোকেয়া আক্তার দম্পতি। সংসার সামলে, সন্তানদের লেখাপড়া করিয়ে, দীর্ঘ ৩০ বছর দাম্পত্য জীবনের পর এবার একসঙ্গে দাখিল (এসএসসি সমমান) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন এই দম্পতি।

বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) দাখিল পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ হলে জানা যায়, দুজনই নরসিংদীর বেলাব উপজেলার বিন্নাবাইদ দারুল উলুম দাখিল মাদরাসা থেকে জিপিএ ৪.১১ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন। বয়সের ভারে নয়, বরং আত্মবিশ্বাস ও অদম্য মানসিক শক্তিতেই তারা প্রমাণ করেছেন—শিক্ষা গ্রহণে বয়স কোনো বাধা নয়।

কাইসার হামিদ দৈনিক নয়াদিগন্ত এবং রোকেয়া আক্তার দৈনিক বুলেটিন পত্রিকার কুলিয়ারচর প্রতিনিধি হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে সাংবাদিকতা করে আসছেন। সাংবাদিকতার বয়স ৩০ বছর পার হলেও এসএসসি না থাকার ক্ষতটা ভিতরে লালন করে চলেছেন দুজনই।

নিজের অনুভূতি জানাতে গিয়ে কাইসার হামিদ বলেন, “অনেকেই ইচ্ছা করে বলত—এসএসসি না দিয়ে সাংবাদিকতা করেন কিভাবে? কথা শুনে কষ্ট পেতাম, কিন্তু উত্তর দিতাম না। আজ আমরা প্রমাণ করেছি, চেষ্টা করলে অসম্ভব কিছু নেই।”

রোকেয়া আক্তার বলেন, “অল্প বয়সে বিয়ে, এরপর সন্তান জন্ম—সব কিছু মিলে পড়াশোনা আর হয়ে ওঠেনি। কিন্তু মনে সবসময় একটা খচখচ করত। এবার সিদ্ধান্ত নিয়েই পরীক্ষা দিই। আজ ফল পেয়ে খুব ভালো লাগছে।”

এই দম্পতির ঘরে পাঁচ সন্তান। বড় মেয়ে স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন, দ্বিতীয় জন স্নাতক শেষ বর্ষে, তৃতীয় সন্তান নার্সিং পড়ছেন এবং দুই ছেলে স্কুলে পড়াশোনা করছে। সন্তানদের পড়াশোনার পাশাপাশি নিজেদের শিক্ষার প্রতি ভালোবাসা রেখে কাইসার-রোকেয়া জুটি দেখিয়েছেন এক অনন্য দৃষ্টান্ত।

দ্বিতীয় কন্যা জেসমিন সুলতানা বলেন, “মা-বাবা এসএসসি পাস করেননি, এটা আমাদের বলার মতো বিষয় ছিল না। কিন্তু এখন আমরা গর্ব করেই বলি—এই বয়সে তারা যা করেছেন, তা অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।”

পাঠ্যপুস্তক হাতে, সংসার ও পেশার দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি নিয়মিত অধ্যয়ন করে দম্পতির এই সাফল্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও প্রশংসার ঝড় তুলেছে। অনেকেই তাদের উদাহরণ টেনে বলছেন—“লজ্জা নয়, শিক্ষার কোনো বয়স নেই।”

এই দম্পতির গল্প প্রমাণ করল, জীবনে দেরি হতে পারে, কিন্তু যদি ইচ্ছা থাকে, কোনো স্বপ্নই বিলম্বে ধরা দেয় না।


বাজিতপুর নিউজ

প্রকাশক ও সম্পাদক: মোঃ মোশিউর রহমান আতিক | নির্বাহী সম্পাদক: মোহাম্মদ খলিলুর রহমান
কপিরাইট © ২০২৫ বাজিতপুর নিউজ । সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত